নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা খবরের পাতার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুমের বাড়ির প্রধান ফটকে হাতবোমা (ককটেল) বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

শুক্রবার (১১ মার্চ) দিবাগত গভীর রাতে নগরীর আলম খান লেন এলাকায় তার বাড়ির প্রধান ফটকে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে এতে কেউ হতাহত বা বাড়ির কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

ঘটনাস্থল থেকে প্ল্যাস্টিকের বোতল ও লাল স্কচটেপ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। বিস্ফোরিত বস্তু ককটেল হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আলোচিত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার প্রতিবাদে সম্প্রতি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে খুনিদের বিরুদ্ধে দেওয়া বক্তব্যের জের ধরেই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে ধারণা করছেন সাংবাদিক নেতা মাহবুবুর রহমান মাসুম।

পাশের বাসায় স্থাপিত একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, রাত ২টা ৩৯ মিনিটে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি নগরীর আলম খান লেনে মাহবুবুর রহমানের বাসার সামনের গেটে একটি ব্যাগসদৃশ বস্তু রেখে যান। ওই ব্যক্তির পরনে হুডি জ্যাকেট এবং মুখে মাস্ক দেখা যায়। বস্তুটি রেখে নির্দিষ্ট দূরত্বে গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন ওই ব্যক্তি। এর প্রায় ১০ মিনিটের মাথায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। ভিডিও ফুটেজে ওই ব্যক্তির চেহারা স্পষ্ট দেখা যায়নি।

এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে বলে জানান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ্ জামান।

তিনি বলেন, ‘রাত ৩টার দিকে ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সেখান থেকে পুলিশ প্ল্যাস্টিকের বোতল ও লাল স্কচটেপ আলামত হিসেবে সংগ্রহ করেছে।’

এ বিষয়ে মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘ত্বকী হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে যারাই সোচ্চার ছিলেন তাদের বিভিন্ন সময় হামলা-মামলার শিকার হতে হয়েছে। একই কারণে তার বাসার সামনে বোমা হামলা চালানো হয়েছে বলে ধারণা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘খুনিরা এইভাবে ভয় দেখাতে চায়। কিন্তু এতে প্রতিবাদ থামবে না। ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলছে এবং এই বিচার হবে। খুনিরা অবশ্যই শাস্তি পাবে।’
এই বোমা হামলার ঘটনায় সন্ধ্যায় থানায় লিখিত অভিযোগ করবেন বলে জানান অ্যাডভোকেট মাসুম।

সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, ‘এই বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে ভয় দেখানোর জন্য। যারা এই নারায়ণগঞ্জকে জিম্মি করে ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে তৎপর, তারাই এটা করেছে বলে মনে করছি। গত শুক্রবার সামবেশে যে দুর্বৃত্ত চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছি, ত্বকী হত্যার অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় দাবি জানিয়েছি তারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রশাসন যদি নির্লিপ্ত না থাকে তাহলে একের পর এক এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং দুর্বৃত্ত চক্রের প্রতি দুর্বলতা থাকার কারণে এই ঘটনা ঘটেই চলেছে।’

হামলার নিন্দা ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কে বা কারা এই বোমা হামলা চালিয়েছে সুর্নিদষ্টিভাবে জানি না। তবে প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে এটা খুঁজে বের করা।’

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, ‘পুলিশ সেখানে কিছু স্কচটেপ প্যাঁচানো বস্তু পেয়েছে। কেউ একটা ককটেলের মতো সেখানে রেখে গিয়েছিল। এই বিষয়টি পুলিশ খতিয়ে দেখছে।’

এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।

তিনি সময় সংবাদকে বলেন, ‘এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। এই ধরনের কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সুতরাং এই ধরনের পরিস্থিতি নারায়ণগঞ্জে চাই না। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত তা স্পষ্ট। তাদেরকে দ্রুত গ্রেফতারের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই। একইসঙ্গে ত্বকী হত্যার বিচার দাবি জানাই।’

মেয়র আইভী আরও বলেন, ‘শহরে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বেড়ে গিয়েছে। প্রশাসনকে সতর্ক দৃষ্টিতে নেওয়ার আহ্বান জানাই। এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে কারও কণ্ঠই রোধ করা যাবে না। আমরা আরও দ্বিগুণভাবে প্রতিবাদ জানাবো। একই সঙ্গে আমরা মাসুম ভাইয়ের পাশে আছি।’

সাংবাদিক নেতার বাড়িতে বোমা হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব, নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্তরের গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ।